Episode 1: TA বা Teaching Assistant
আজকে আমরা এক ফ্যাসিস্ট এর কাহিনী জানবো। তার নাম প্রভু উৎপল কান্তি দাস। উৎপল থেকে উৎ টাকে উৎখাত করে শর্ট করে প্রভুপল ডাকতে পারি আমরা।ও প্রভু কেন ডাকলাম! উনি চান ওনাকে সবাই প্রভুর মত মানুক।উনি যাহা বলিবেন তাহাই সত্য এই জগতে, আর সব মিথ্যা। ওনার ওপরে কেউ কথা বলতে পারবে না। একজন ফ্যাসিস্ট এর যা যা বৈশিষ্ট্য থাকে ওনার মধ্যে সবই আছে। কাছে থেকে ওনাকে যারা দেখেছেন আপনারা রিলেট করতে পারবেন সহজেই। উনি বিশাল এক সিন্ডিকেট বানিয়ে রাখছেন ওনার ডিপার্ট্মেন্টে।এই সিন্ডিকেটে কেবল স্টুডেন্টই না, ফ্যাকাল্টিরাও আটকা। এই বিশাল সিন্ডিকেট আমরা ধাপে ধাপে উন্মোচন করবো। এপিসোড আকারে। আজ বলতে পারেন এই সিরিজের প্রথম এপিসোড।আজ আমরা তার সো কলড "TA” সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলবো। ধাপে ধাপে আমরা ওনার সিন্ডিকেটের বাকি উপাদানগুলো তুলে ধরবো। আজ তাহলে দেখা যাক এই ব্যক্তিত্বহীন ছেলেপেলেগুলারে ব্যবহার করে আমাদের প্রভুপল কিভাবে তার ব্যক্তিগত কাজ করান এবং সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখছেন বছরের পর বছর। এবং এই টিএগুলারই বা লাভ কি টিএগিরি করে।
TA বা Teaching Assistant বলতে আপনারা আমরা কি বুঝি? এমন কাউকে বুঝি যিনি প্রফেসরকে রিসার্চে সাহায্য করবেন, স্টুডেন্টদের একাডেমিক হেল্প করবেন(১২৮ নম্বর রুমে সব ডিপার্ট্মেন্টের নির্বাচিত টিএ আছে), প্রফেসরকে কোর্স নেয়ার ক্ষেত্রে হেল্প করতে পারেন,,এইতো! অর্থাৎ পড়াশোনা রিলেটেড এরকম প্রোডাক্টিভ কিছুই করবেন!
আচ্ছা এবার আমরা প্রভুপল এর সো কলড TA গুলার কাজের লিস্ট গুলো দেখি। আমরা একটা সম্পূর্ণ দিনের রুটিন অনুযায়ী আগাই, আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
- একটা অংশ সকাল সকাল প্রভুপলের বাসায় চলে যাবে, প্রভুকে ঘুম থেকে তুলে আনবে। ড্রাইভ করে নিয়ে আসতে পারে আবার কখনো কখনো প্রভু নিজেই ড্রাইভ করবেন।
- একজন চল যাবে প্রভুপলের পুত্রকে স্কুলে রেখে আসতে।
- বাজার না থাকলে বাজারে যাবে একজন।
- এবার প্রভুপল ভার্সিটিতে আসলো, তার রুমে এসে বসলো। কফি খাবেন এখন উনি। একজন গরম পানি বসিয়ে দিবেন, কফির কৌটাটা বের করে সুন্দর এক কাপ কফি বানাবে। তারপর ওনার গলায় একটা টিস্যু আটকে দিবে যেন শার্টে কফি না পরে খেতে খেতে। প্রভুপল মগে চুমুক দিয়ে আরামে বলবেন "আহ"! এটা শুনে টিএ ছেলেটার জীবন স্বার্থক হয়ে যাবে।
- লাঞ্চ নিয়ে আসবে একজন টিএ। প্লেটে সুন্দরমত পরিবেশন করে প্রভুপলকে খেতে দিবে।উনি খাবেন আর গল্প করবেন। সব টিএগুলো তাদের ১০০ ভাগ ইন্দ্রিয় প্রয়োগ করে সেই কথাগুলো শুনবে, হাসির কথা হলে হেসে গড়িয়ে পরবে, কোনো অংশে মাথা নাড়াবে, হ্যা স্যার হ্যা স্যার, জ্বী স্যার জ্বী স্যার করবে।আহা এ তো স্যার নয় যেন সাক্ষাৎ প্রভু!
- প্রভুপলের মাথটা খুব ধরেছে, বাবা মাথাটা একটু টিপে দে না! তখন একজন টিএ অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে প্রভুর হাতটা তার কাধে রেখে হাতটা টিপে দিবেন। হাত টেপাটেপি হলে কপালে ম্যাসাজ করে দিবেন। এ সুযোগ কয়জনের হয় বাবা! এই টিএ তো সজ্ঞে যাবে সিওর!
- লাঞ্চের পর খুব বিড়ি খেতে ইচ্ছে হয় প্রভুপলের। একজন টিএ কে পাঠাবে এক প্যাকেট বেনসন আনতে।তারপর আরামে একটা টান দেবেন এবং আরামে চেয়ারে এলিয়ে পরবেন।
- বিড়ির পর খুব বাথরুম পায় প্রভুপলের। বাথরুমে গেলেন, সাথে একটা টিএ ও গেলো। হাগু করলেন আমাদের প্রভুপল।সুচু করতে যাবেন এমন সময় টিএ বললো আপনি একজন প্রভু হয়ে নিজের পিছনদেশে হাত লাগাবেন তা কি করে হয়! আমরা আছি কি করতে! (এটা বানিয়ে বললাম। যদিও এমন কিছু হবার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেয়া যায়না
- প্রভুপলের উদাস লাগছে, গান শুনতে পারলে খারাপ লাগতো না। কই গান ধর তো বাবা! উনি কিন্তু অনেক খামখেয়ালি আর মজমাস্তি পছন্দ করা ধরনের লোক। গান বাজনা,আড্ডা, ফিলোসোফিক্যাল কথাবার্তা এসব করতে পছন্দ করেন। এজন্য খেয়াল করবেন টিএ দের মধ্যে কয়েকটা থাকে যারা গানবাজনায় ভালো।স্পেশালি বাউল বা ফোক সংগুলো। এরা গান গেয়ে প্রভুর মনকে আনন্দিত করেন।
- প্রভুপলের গাড়িটা তার খুবই প্রিয়।তাই একটু ধুলাবালি পড়া মাত্রই টিএ গুলা স্বগৌরবে তা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়ে।
- রাত হলে প্রভুর গাড়িতে চড়ে তাকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসতে হয়।
- এরকম আরও জানা অজানা শত শত ব্যক্তিগত কাজ করে এরা যা লিখতে গেলে শেষ হবে না। একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে এগুলো কেনো করবে! আর চেয়ারম্যান এগুলো এলাও কেনো করবে! এগুলোর কারনে অনেক ব্যক্তিত্ববান আর যোগ্য ছেলেপেলে ডিপার্ট্মেন্ট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যত্তসব পা চাটা সস্তা কিছু পোলাপান দিয়ে ডিপার্টমেন্ট ভরে যাচ্ছে।
জগতে কোনো সম্পর্কই স্বার্থহীন না।আপনি কারো জন্য কিছু করলে তার থেকে বিনিময়ে কিছু আশাও করবেন। তো আমাদের এই টিএগুলা কি কি সুবিধা পায় সেটা দেখা যাক।
- এই টিএগুলা প্রায় সবাই বিলো এভারেজ স্টুডেন্ট। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ছেলেপেলে হওয়ায় ফ্যাকাল্টিরা(৮০% তো হবেই) এদের ফেস চিনে নম্বর দেন।আর এভাবে কোনোমতে পাশ করে পার হয়ে যাইতেছে সেমিস্টারের পর সেমিস্টার।
- কোর্স অফারিং এ এরা এদের পছন্দ মত সেকশন আর ফ্যাকাল্টি নিতে পারে। এমনও দেখা গেছে স্টুডেন্টরা এসে অভিযোগ দিয়েছে যে সে কোর্স নেয়ার পর রেমুভ কিভাবে হলো! নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আপনারা কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোর্স অটো রিমুভ হয়ে
- এই বিলো এভারেজ মেধা আর সস্তা পারসোনালিটির ছেলে মেয়েগুলা অতীতে(স্কুল, কলেজ) কখনোই আশেপাশের মানুষের এটেনশন পায় নায় এটা নিশ্চিত। এই পিএগিরি করে এখন তারা মোটামোটি এটেনশন পাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে।"ডিপার্ট্মেন্টের ভাইয়া" হয়ে গেছে তারা।চেয়ারম্যানের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রোফাইল পিক দেয় আর ক্যাপশন হয় "মাই আইডল"! সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো আর জানে তাদের এই ভাইয়া স্যাররে সুচু পর্যন্ত করায় দেয়!
- মেয়ে পটানোর আত্মবিশ্বাসও পেয়ে যায় এরা তখন। অবশ্য এদের পছন্দ করে এদের মতই মেয়েরা। যারা নিজেরাও বিভিন্ন অন্যায় সুবিধা পেতে চায়। এটেনশন, পছন্দমত সেকশন, কালচারাল প্রোগ্রাম নাচের সুযোগ হাবিজাবি।
- ফ্যাকাল্টিদের বার্থডে সেলিব্রেট করলে কেক টেক খেতে পারে! অন্যান্য খাবারের আয়োজন থাকলে সেগুলোরও একটু ভাগ পায়।
পরিশেষে বলা যায়, একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে এগুলো কেনো করবে! সে কেনো তার স্যারের মাথা টিপে দিবেন, চা বানায় দিবেন, বিড়ি এনে দিবেন, স্যারের ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসবেন! সে পড়াশোনা করবে, রিসার্চ করবে, নিজের ক্যারিয়ার গড়বে।নিজের টাকা দিয়ে পড়ে আরেকজনের মাথা টিপে দেয়! আমার মনে হয়না এরা কখনো নিজের বাবা বা মায়ের মাথা টিপে দিয়েছেন কখনো, কপাল ছুয়ে জ্বর আছে কিনা মেপে দেখেছেন কখনো। এই নির্লজ্জগুলাকে প্রচন্ড গৌরব নিয়ে বলতে দেয়া যায় "আমি স্যারের টিএ"! তোরা টিএ না রে বাবা তোরা PA আজ থেকে। পারসোনাল এসিস্টেন্ট! ঠিক আছে? কি? পারসোনাল এসিস্টেন্ট! মনে থাকবে?